অনুসরণকারী

বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০

জানে ‘আলমের গোপনে কাঁদো গোপনেই মুছে ফেলো অশ্রু’ সুন্দর সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি

 


কবি জানে আলম সাহিত্য অঙ্গনে বিচরণ করছেন দুই দশকেরও অধিককাল ধরে। এ সময়ের মধ্যে অবদান রেখেছেন এবং রেখে চলেছেন সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায়। কবিতা, ছড়া, উপন্যাস এবং শিশুসাহিত্য মিলে তার গ্রন্থ সংখ্যা বিশ। দেশের প্রায় সকল দৈনিক, মাসিক, সাপ্তাহিক ও লিটলম্যাগে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়ে আসছে। তাঁর লেখা সর্বপ্রথম আমার চোখে পড়ে সম্ভবত ২০০৯ সালের দিকে। অর্থাৎ আজ থেকে এগারো বছর আগের কথা। কবিতার বই ছিলো সেটি। বইয়ের নাম ‘মেশকের মায়াবী ঘ্রাণ’। তখন তিনি ইতোমধ্যে এই অঙ্গনে এক দশক পাড় করেছেন। আর আমি ছিলাম একেবারেই নতুন। দু’একটা ছড়া খুব কষ্ট করে লেখি। মাঝে মধ্যে শিশুকিশোর পাতায় একটা লেখা ছাপে। গদ্য কবিতার প্রতি আগ্রহ ছিলো না তেমন। তবু বইটা আগাগোড়া পড়লাম। সহজ সাবলিল ভাষা ও ভাব। বেশির ভাগ কবিতাই বোধগম্য ছিলো।
কবিতাগুলো আধ্যাতিক এবং তাসাউফের ঘ্রাণ ছিলো তাতে। এরপর অনেকদিন পর্যন্ত তাঁর কোন লেখা পড়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। ২০১৯ সালের জুন মাসে আমার সম্পাদিত লিটলম্যাগ শীতলক্ষ্যা’র ২য় সংখ্যায় নদী বিষয়ক একটি ছড়ার মাধ্যমে আবার তাঁর লেখা নতুন করে নজরে আসে। সে বছর প্রকাশিত হয় তাঁর ‘বৃষ্টি ঝরে সুরে সুরে’ নামক শিশুকিশোর ছড়াগ্রন্থটি। কবি আফসার নিজাম, রহমান মাজিদ, তাজ ইসলাম এবং আমি সহ আরো কয়েকজন বইয়ের পাঠ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। এ বছর (২০২০ সাল)  প্রকাশিত হয় তাঁর আরেকটি কবিতার বই ‘গোপনে কাঁদো গোপনেই মুছে ফেলো অশ্রু’। বৈশ্বিক মহামারি করোনার লকডাউন শেষে কবির গ্রাম কেন্দুয়ায় সাক্ষাত হলে তিনি বইটি উপহার দেন। এক বৈঠকেই পড়া শেষ করে ফেলি। বরাবরের মতো সেই সহজ সাবলিল ভাব ও ভাষা। তাঁর বাস্তব জীবনের আচরণ-কথাবার্তার মতো সরল, সহজবোধ্য ও জটিলতামুক্ত বর্ণনা। ভাষা, ছন্দ ও বর্ণনাভঙ্গিতে তেমন বৈচিত্র না থাকলেও ভাব, উপমা ও বিষয় বৈচিত্র বেশ লক্ষণীয়। তার কবিতা বক্তব্যধর্মী, অনেক ক্ষেত্রেই তিনি শিল্পের চেয়ে বক্তব্যকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কোন ধরনের রহস্যময়তার বদলে প্রায়শ লম্বা বাক্যের মাধ্যমে পুরো বক্তব্যকে আয়নার মতো স্বচ্ছ করে পরিবেশন করেছেন। তিনি একটি সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখেন, তাই সেই অনুপ্রাণনা থেকেই সমাজের অসংগতিগুলো শোধরানো এবং সুন্দর ও উন্নত জীবনের পথ বাতলানো তাঁর উদ্দেশ্য। এজন্যেই সাহিত্যে পরীক্ষা নীরিক্ষার তিনি খুব একটা পক্ষপাতি নন। তবু তার কাজে স্বাতন্ত্র লক্ষ করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হলো কবির চিন্তার শুদ্ধতা ও সামঞ্জস্যতা। চিন্তা ও বিশ্বাসের স্ববিরোধিতা ও অসামঞ্জস্যতা থেকে অনেকটা মুক্ত এ কবি। তবে নদীর জোয়ার ভাটার মতো সাধারণত মানুষের মন কখনো আশা এবং কখনো হতাশার দোলাচলে দুলতে থাকে। কবির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই কখনো তিনি উচ্চারণ করছেন হতাশার সুর─
                           
                  ...কেনো এতো চারিদিকে আগুন। আগুন।
                  নেই কেনো ভালোবাসা প্রেমের ফাগুন
                  শ্মশানের নীরবতা বাসভূমে এই
                  চাঁদের হাসির মতো কবিতাও নেই...


আবার পরক্ষণেই গর্জে উঠছেন─
                 ...তোমাদের দাম্ভিকতা সেদিন চূর্ণ হবে
                  কাঁচের তৈজসপত্র হাত থেকে পড়ে চূর্ণ হয়ে যাওয়ার মতো
                  আজকের দলিতরাই সেদিন ললিত হয়ে উঠবে...
                  সেদিন চাকু ছুড়ির বদলে ফুলের রাজত্ব কায়েম হবে।

কখনো তিনি বলছেন,
                  তুমিও মেলে ধরো নিজের স্বরূপ
                  তা নাহলে তোমাকে ধরতে হবে অন্যের রূপ
                  অন্যের ক্রীড়ণক হয়ে বাঁচা
                  সেতো কাঁচের ঘরে পাপের পুতুল হয়ে নাচা

কখনোবা শামস তাবরিজ বা ইকবালের ন্যায় প্রেম পথের কথা বলছেন। সে প্রেমকে সত্তায় ধারণ করে প্রেমিক হতে চাইছেন─
                 আমি একটি পাতাবাহারের গায়ে হাত বুলাতেই
                 সে গোলাপ ফুটতে লাগলো
                 আমি যে প্রেমিক
                 শত বছরের মৃত নদীকেও কল্লোলিত করে যে প্রেম
                 আমি সে প্রেমকে সত্তায় ধারণ করেছি।

তাঁর পূর্বপুরুষদের সাথে যে তাঁর সাদৃশ্য আছে এটা বুঝতে পেরে তিনি নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছেন─
                 শামস তাবরিজের মতো কারও সান্নিধ্য পাইনি যদিও
                 তবু আমাকেই আমার মনে হয় জালালুদ্দিন রূমীর উত্তরপুরুষ...
                 কারও কাছ থেকে ভাব ও ভাষায় বিভোর হবো না আমি
                 এই বলে গাছের পাতাদের যদিও থামালাম
                 কিন্তু থামাতে পারিনি পাখিদের
                 থামাতে পারিনি ফুলদের.......
এটা কবির স্ববিরুধিতা! না এখানে তিনি কোন স্বরূপের কথা বলছেন? চিন্তা, বোধ, কর্ম, চরিত্র তথা আদর্শের স্বরূপ।যা নিজের বিশ্বাসের সাথে সংগতিপূর্ণ।একেই সম্ভবত তিনি প্রেম নামে আখ্যায়িত করেছেন এবং ইকবালের খুদি দর্শনের মতো হৃদয়ের পবিত্রতার প্রতি নিজের মনকে তাকিদ দিয়ে যাচ্ছেন─
                 হৃদয়টা নোংরা রেখে শখ করে ছাদে ফোটাই গোলাপ বেলি।
                 আমলে অমল হতে পারিনি অথচ ধুপ-দুরস্ত পোশাকে
                 প্রজ্ঞার প্রকাশ ঘটাতে চাই
                 বাঁশঝাড়ের কানিবক হয়ে আকাশচারী দুরন্ত ঈগলকে করি অবজ্ঞা।
                 এভাবে সত্যতীর্থে পৌঁছা যায় না মন। মন তাই ফানা হও।
                 নিজেকে নিহত করো নিবিড় প্রেমে।
সুখ-দুখ, হাসি-কান্না, আনন্দ বেদনা নিয়েই মানুষের জীবন। কবিও তাই দুঃখ পান। কিন্তু দুঃখে কান্নার বদলে এর নির্যাস থেকে তিনি পুষ্পিত বোধের প্রফুল্ল প্রকাশ ঘটাতে চান এভাবে─
                 দুঃখই পূত করে জীবন ও জগৎ
                 দুখের মেঘ থেকে যে বৃষ্টি ঝরে
                 পৃথিবীকে তা-ই করে সবুজ সুন্দর...
                 তোমার জীবনে যতটুকু মাধুরিমা।
                 যতটুকু ছন্দ শিল্প বৈভব
                 দুঃখ থেকেই পেয়েছো সব।
                 দুঃখকে তাই নিজের অবয়ব করে নাও।
কবি তার কালের দিকে তাকিয়ে ভাঙা গড়ার নির্মম দৃশ্য অবলোকন করেন। কালের কলঙ্ক, ভাঙার কাজে সিদ্ধহস্ত মীর জাফর, উমীচাঁদদের দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন-
                তোমাদের মাঝে কে কে মীর জাফর, কে কে উমীচাঁদ
                লুৎফার করুণ কষ্ট দেখে যারা অট্টহাসি হেসেছো। বাজিয়েছো করতালি
                মীরনকে প্ররোচিত করেছো পৈশাচিক কাজে। তাদের আমি ভালো করেই চিনি।
                যদি কাউকে নির্দিষ্ট করে বলি, মধ্যরাতে যারা গনতন্ত্রকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে,
                তুমি তাদের একজন, তবে তার মুখ পাংশু হয়ে যাবে জানি।

এসব কুলাঙ্গারদের দোসর কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে কবি উচ্চারণ করেন─
                 আমাকে উপড়ে উঠতে দেখে
                 কতিপয় বামুন
                 বলে এবার থামুন
                 নিচে নামুন
                 আমি নামলে ওরা ঘামতে শুরু করে
                 নিচে নামলেও ওরা হাঁটুর নিচে পড়ে ঠিক
                 চেঁচামেচি করে আর ছুটাছুটি করে দিগি¦দিক
তাঁর উচ্চারণে ওরা ঢিল ছুঁড়ে। হৃদয়কে রক্তাক্ত করে। নির্যাতিত কবি নিজেকে তখন দেখতে পান বেলালদের কাতারে─
                অন্যের গায়ে ঢিল ছুঁড়তে ছুঁড়তে যার ঢিল ছুঁড়া অভ্যাস হয়ে যায়
                সে একসময় কাবার গায়েও ঢিল ছোঁড়ে।
                কে তুমি ভাই আমার গায়ে মারছো এভাবে ঢিল!
                আমার অন্তরসত্ত¡া তো তপ্ত বালুতে গড়াগড়ি খাওয়া হাবসী বেলাল।
                আমার গায়ে ঢিল ছুঁড়ে সুখ পেলে তাই করো
                কাবার গায়ে যদি ঢিল লাগে; আবাবিলের কঙ্কর থেকে তুমি রক্ষা পাবে না।
                আর তোমার পরিনতি হবে আবরাহার মতো।
অসত্য-অসুন্দরের বিরুদ্ধে সত্য-সুন্দরের বিজয়ের জন্যে সত্য সুন্দরের পক্ষের মানুষদের প্রণোদনা দিতে গিয়ে তিনি অনুরণ তোলেন─
                ...আমরা হেরে গেলে শেয়ালেরা মানবতার সনদ নেবে
                আমরা হেরে গেলে এই সৌজন্য ও সুখ সম্প্রীতির শ্যামলিমা
                আঁধারেরা এসে করবে গ্রাস।.......
এ বইটিতে কবি হেরার আলোকে পুঁজি করে প্রেম পথের পথিক হয়ে এভাবে নিপিড়িত হয়ে নিপিড়িত মানুষের কথা বলে আর সত্য সুন্দরের উচ্চারণ তুলেই পৌছুতে চেয়েছেন তাঁর কাঙ্খিত গন্তব্যে।  

সোমবার, ১ জুন, ২০২০

সিগারেট


                 


সিগারেট
মিনহাজ উদ্দীন আত্তার
ড়ন্ত বিকেল। দূর থেকে চিৎকারটা বেশ জোরেই শোনা গেল। কিন্তু বুঝতে পারলাম না কীসের চিৎকার। চারপাশে তাকিয়ে দেখি সব কিছু শান্ত, স্বাভাবিক। যাক, চিৎকারটা কেউ দুষ্টমি করে দিয়েছে, কোনো অঘটন ঘটে নি। মনকে প্রবোধ দিলাম। নিশ্চিন্তে এগোতে লাগলাম। কিছুদূর এগোতেই আরেকটা চিৎকার। সামনের দিক থেকে এসেছে চিৎকারটা। সেদিকে তাকালাম।
দূরে একটা গাড়ি থেমে আছে। তার চারপাশে অনেকগুলো মানুষ, দাঁড়িয়ে আছেন গোল হয়ে।
কোন অ্যাক্সিডেন্ট! বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। দ্রুত এগিয়ে যেতে লাগলাম সামনের দিকে। গাড়ির পাশে মানুষজন ক্রমে বাড়ছে।
আবার চিৎকার ভেসে এলো। বুকের ভেতরটাও কেঁপে উঠল আরো একবার। পা দু’টো আরো দ্রুত চালিয়ে এগুতে লাগলাম। গাড়ির সামনে এসে বোধ হলো কোন চোর টোর ধরা পড়েছে। তবে চোর বলে কাউকে সন্দেহ হচ্ছে না। গাড়ির পেছনে এসে নির্বাক হয়ে গেলাম।
আট-নয় বছরের এক কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেঁধে রাখা হয়েছে। তাহলে জনসমাগম এই বাচ্চাটিকে ঘিরে। আর চিৎকারের উৎসও এ বাচ্চাটি। লোকের ভিড় ঠেলে এক ব্যক্তি প্রবেশ করলো। বাচ্চাটিকে দেখেই চিৎকার দিয়ে উঠলো
- হালার পুতেরে এইহানে গাইড়া হালা (...অকথ্য)
মানুষজনের ভাবান্তর নেই। সবাই দর্শকের গ্যালারিতে বসে যেন সার্কাস উপভোগ করছে। লোকটি যখন বাচ্চাটিকে নির্যাতন করার জন্য উদ্ধত হলেন, আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। আর চুপ থাকতে পারলাম না।
-    এই যে ভাইজান, বাচ্চাটির অপরাধ কি? এভাবে পেটাচ্ছেন কেন?
-    একটু শিক্ষা দিচ্ছি দেখেন না। লোকটি রাগান্বিত স্বরে বলল।
-     আপনাকেও শিক্ষা দেওয়া উচিত! শ্লেষ মাখা কন্ঠে বললাম আমি।
এবার লোকটি আরো উত্তেজিত কন্ঠে বলল, মহল্লায় নতুন আইছেন বুঝি?
আমি প্রত্যুত্তর করার আগেই মহল্লার মাতবর সাহেব ভীর ঠেলে প্রবেশ করেই বললেন-
-    আরে সাংবাদিক সাহেব, কিছু মনে কইরেন না, হ্যারা আপনেরে হয়তো চিনতে পারে নাই, তয় কহন আইলেন মহল্লায়।
মাতবর সাহেবের জওয়াব না দিয়েই বললাম, এই বাচ্চার অপরাধ কী আর কেনই বা এই সভ্য সমাজে নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে?
পূর্বের লোকটা জানালো, যাকে বেঁধে রাখা হয়েছে সেই ছেলেটির নাম কাওছার। কাওছার মহল্লায় কোন বেকারীর গাড়ি আসলেই খাবারের জিনিস চুরি করে, যখন বেকারীর লোক দোকানে মাল দিতে যায়।
-    অনেকবার নিষেধ করছি পোলাডারে কিন্তু বদ-অভ্যাসটা এহনও ছাড়ে নাই। তাই ওরে একটু শিক্ষা দেওয়ার লাইগ্যা এই ব্যবস্থা যাতে কইরা এমুন আর না করে।
লোকটি এবার বিজয়ীর ভঙ্গীতে আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানী হাসি হাসছে। আমি এবার একটু ভালো করে তার দিকে তাকালাম। খুব পাতলা একটা শার্ট পড়েছেন তিনি, সাদা ধরনের শার্ট। শার্টের নিচে পরা গেঞ্জিটা দেখা যাচ্ছে। বুকের কাছে দু’টো বোতাম খোলা, ভারী একটা সোনার চেইন দেখা যাচ্ছে ফাঁক দিয়ে। চেইনের নিচে গোল করে আরবী হরফে ‘আল্লাহ’ লেখা। খেদমতে খলক ফাউন্ডেশনের আরবী শিক্ষা কোর্স করে এখন আরবী ভালোই পড়তে পারি।
শার্টের পকেটের ফাঁক দিয়ে দামি সিগারেটের একটা প্যাকেট বের হয়ে আছে। আমি খুব বিনয়ী গলায় বললাম, মফস্বলের এটা --------। কথাটা শেষ করতে হলো না। তার আগেই পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে এগিয়ে দিলেন তিনি।
একটা জিনিস আমি অনেকদিন ধরে খেয়াল করেছি- কারো কাছে যদি দু’টো টাকা চাওয়া হয়, তাহলে সাধারণত দিতে চায় না সে। পথে-ঘাটে অনেক অসহায় ফকিরকে দেখতে পাওয়া যায় দু’টাকার জন্য আধা ঘন্টা ধরে ফিরিস্তি দিতে হয়। কিন্তু সে যদি সিগারেটখোর হয় এবং তার কাছে যদি সিগারেট চাওয়া হয়, তাহলে দিয়ে দেয় নির্বিঘ্নে। এটা কি একজন নেশাখোরের প্রতি আরেকজন নেশাখোরের সহমর্মিতা! অনেকদিন ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছি, কিনারা করতে পারিনি। সিগারেটটা হাতে নিয়ে আগের চেয়েও বিনয়ী গলায় বললাম,
-    একটা কথা জিজ্ঞেস করি ভাইজান- দিনে আপনি কত প্যাকেট সিগারেট খান?
-    তা দিয়া আপনের দরকার কী? কিছুটা কর্কশ গলায় লোকটা প্রত্যুত্তর করলেন।
-    না, দরকার তেমন নাই।
-    তাইলে?
-    না, একটু জানতে ইচ্ছে করছে আর কী?
-    আড়াই থেইকা তিন প্যাকেট।
-    এক প্যাকেট সিগারেটের দাম কত?
-    দুইশ টেকা।
আমি একটু হিসেব কষে বললাম, এক প্যাকেট সিগারেটের দাম দুইশত টাকা হলে তিন প্যাকেট সিগারেটের দাম হয় ছয়শত টাকা। সর্বনাশ!
-    সর্বনাশের কী হইলো?
-   একটা দোকানের মালিক হয়ে ----। কথাটা শেষ করার আগেই লোকটা বললেন, না, আমি মালিক না, আমি এই দোকানের ম্যানেজার।
-    একজন সামান্য ম্যানেজার হয়ে আপনি ছয়শত টাকা কেবল সিগারেটের পেছনে খরচ করেন! একদিনে ছয়শত টাকা মানে মাসে আঠারো হাজার টাকা। অন্য খরচ বাদই দিলাম। আপনি জানেন, এই টাকা দিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের সাত-আটজন মানুষ পুরো মাস খেতে পারবে! আর এই কাওসারের মতো বাচ্চা পেটের ক্ষুধার জ্বালায় চুরি করতে হবে না। মাত্র দশ টাকার জন্য এভাবে নির্যাতিত হতে হবে না। আপনি তাকে শাস্তি দিয়ে শিক্ষা দিচ্ছেন, কিন্তু আপনি নিজে এখনও অশিক্ষিতই আছেন।
কথাটা বলেই তার দিকে সিগারেটটা ফিরিয়ে দিলাম আমি। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন তিনি। তাকে আরো অপ্রস্তুত করার জন্য আমি বললাম, যারা প্রতিদিন এতগুলো টাকা স্রেফ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে অপব্যয় করে, তাদেরকে আমার মানুষ মনে হয় না। প্রতিদিন এদেশে অনেক মানুষ না খেয়ে থাকে, স্রেফ পানি খেয়ে থাকে।
এবার জনাকয়েক ব্যক্তি প্রতিবাদ করলো, কাওসারকে কাজ দিলে তো সে এভাবে অন্যায় করে বেড়াতো না। লোকটি কাওসারের বাঁধন আগেই খুলে দিয়েছিল। এখন কাওসারকে কাছে টেনে নিয়ে বললো, হ্যায় আইজ থেইকা আপনেগো খেদমতে খলক ফাউন্ডেশনের নৈশ মাদরেসা ‘দারুল উলুম’-এ রাইতে পড়ব। আর দিনে আমার ফুটফরমাইশ হুনব।
মনের অজান্তেই চোখের কোন ভিজে ওঠে লোকটির মহানুভবতা দেখে। সত্যি আজ আমাদের মাঝে ‘আলোকিত মানুষ’ অনুপস্থিত। সবাই স্বার্থান্বেষী। কিন্তু এর মাঝেও কিছু মানুষের দেখা মেলে যারা আলোর অভাবে দিকভ্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু একটু আলো জ্বেলে দিলেই তাদের মনুষত্ব জেগে ওঠে।□

শিশুতোষ চলচ্চিত্র : বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকার নেপথ্যে


শিশুতোষ চলচ্চিত্র :
 বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকার নেপথ্যে
আ জি জ  হা কি ম


সিডি ভিসিআরের যুগে আমাদের গ্রামে মাঝে মাঝে খেয়াল করতাম বেদের মেয়ে জোসনাআর কেয়ামত থেকে কেয়ামত দেখে মানুষজন কীভাবে চোখ আর নাকের পানি এক করেছে। কারেন্ট তো ছিল না, ভিসিআরের সাথে পেট্রোল ইঞ্জিন দিয়ে চলত কিছু কিছু সময়। ২০০২ সালের দিকে যখন এলাকায় বিদ্যুৎ আসা শুরু হল, সেইসময় থেকেই মূলত বাড়ি বাড়ি টিভি ডিভিডি বাড়তে থাকল। আমাদের বাড়িতে একটি সাদাকালো টিভিতেই প্রথম দেখি দীপু নাম্বার টু তখন শিশুতোষ চলচ্চিত্র কী বুঝিনি। কিন্তু এই দীপু নাম্বার টু অনেক ভালো লেগেছিল। হয়তো বা আমার ছোট্ট মনে বেশ প্রভাবও ফেলেছিল। পরে ইন্টারনেট দুনিয়ায় হন্যে হয়ে খুঁজেছি এই বাংলা শিশুতোষ চলচ্চিত্র আছে কিনা। না, নাই। সত্যজিৎ রায়ের পথের প্যাঁচালী  তো অনেক আগের। সেই ছুটির ঘন্টা, এমিলির গোয়েন্দা বাহিনী, পুরস্কার  - যা। এরপর তৈরী হলো মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত- আমার বন্ধু রাশেদ অনুপম শিল্পীগোষ্ঠীর ব্যানারে জাফর ফিরোজ ২০০৯ সালে নির্মাণ করেছিলেন- দূরবীন কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের আরেকটি চলচ্চিত্র- কালো মেঘের ভেলা দীপু নাম্বার টু আর আমার বন্ধু রাশেদ দুইটি সিনেমা তৈরী হয়েছে একই সমীকরণে।



. উভয় সিনেমাই সরকারি অনুদানে তৈরি।

. দু’টোই ড. জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত।

. চলচ্চিত্র দুইটিই পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। এবং

. তৈরি হয়েছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর ব্যানারে।

আর বাংলাদেশে শিশুতোষ চলচ্চিত্র বলতে এখন পর্যন্ত এই দুই সিনেমাকেই বুঝায়। এর থেকে বোঝা যায় সরকারি অনুদান ছাড়া শিশুদের চলচ্চিত্র বাংলাদেশে তৈরি হয় না। আর সেটা তৈরি হলেও ইমপ্রেস টেলিফিল্মই করে। অন্য কারো এই ব্যাপারে নূন্যতম আগ্রহ নেই। কারণ এখানে নেই কোন ব্যবসা। নেই রোমাঞ্চ। শিশুদের নিয়ে গল্পের কাজ করলে . জাফর ইকবালই করেন। কারণ দুইটিই সরকারি অনুদানের সিনেমা এবং দুইটিই তার উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি। আর কেউ কি শিশুদের জন্য গল্প লিখছেন না। নাকি শুধু প্রিয় তুমি কার লিখতে ব্যস্ত। শাহেদ আলীর ছোটগল্প জিবরাঈলের ডানা দিয়েও একটি চলচ্চিত্র হতে পারত। কিন্তু হয় নি। তাহলে কি বাংলাদেশ শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণের উপযুক্ত জায়গা নয়(?) আশি বছরের বুড়োর জন্য যে সিনেমা দশ বছরের বাচ্চার জন্যও বাংলাদেশে সেই সিনেমা। শিশুমন গঠনে সিনেমার যে ভূমিকা তা আমরা অস্বীকার করলেও, শিশুরা এই মন বসে না পড়ার টেবিলে, মনের মাঝে তুমি, এই হৃদয় তোমার আমার দেখে দেখেই বড় হচ্ছে এবং তারা সাকিব খান মার্কা ডিসুম ডিসুম খেলা খেলেই চুলের আগায় হাত দিয়ে একটু ঝাঁকি দিয়ে, বুকের বোতাম খুলে খুল্লাম খুল্লা অবস্থায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এই দশা শুধু বাংলাদেশে নয়। ভারতেও একই অবস্থা। আমির খানের তারে জামিন পার বাদে আমার কাছে তেমন উল্লেখযোগ্য শিশুদের চলচ্চিত্র চোখে পরে না। মাই নেম ইজ কালাম একটি সুন্দর সিনেমা। ইরানের বিখ্যাত চলচ্চিত্র- চিলড্রেন অব হ্যাভেন  এর কাহিনী নিয়ে বলিউড একটু কাটছাঁট করে বানিয়েছে বোম বোম বলে  কিসের মধ্যে কী? বাচ্চাদের সিনেমা সেখানেও ধর্ষণের মত দৃশ্য রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সে যাই হোক যাদের যা শেখানোর চেষ্টা চলে তারা তা- শিখবে। কলকাতায়ও তেমন একটা শিশুতোষ চলচ্চিত্র তৈরি হয় নি। তবে সবচে মানের বলতে পাকারাম বলা যায়।
দীপু নাম্বার টু আর আমার বন্ধু রাশেদ  একই ঔপন্যাসিকের গল্প হওয়ায় গল্পের ধাঁচটাও একই। স্কুলে গল্পের নায়ক এসে হাজির হওয়ার মাধ্যমেই গল্প শুরু। ওদিকে ভিলেন দীপু নাম্বার টু শ্রেণী কক্ষের যেস্থানে বসেছিলেন, আমার বন্ধু রাশেদেও অই একই স্থানে ভিলেন বসা। দুটোতেই ভিলেনের মারামারি। পরে অবশ্য মিলে যায়। তারিকের আরেক নাম কাচু ভাই। অন্যদিকে আমার বন্ধু রাশেদেও রাশেদের এক এলাকার বড়ভাইয়ের নাম কাচু ভাই বলা হয়েছে। এর মানে দাঁড়ালো দুইটি চলচ্চিত্র একই পরিচালক একই গল্পকারের হওয়াতে গুণগতমানের দিক দিয়ে আমার কাছে তেমন পার্থক্য আসেনি। কেউ দুটি চলচ্চিত্র মনযোগ সহকারে বেশ কয়েকবার দেখলেই দুটো সিনেমার মিল কোথায় বুঝতে পারবেন। এই দুই চলচ্চিত্র দুটির কথা বললাম এজন্যে যে, এ দুটো সিনেমাই আমি বহুবার দেখেছি। আর ডায়ালগের উল্টাসিধা বিষয়গুলোও মাথায় ধরেছে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সুস্থ মননের সমাজ বা চিন্তা আমরা যদি রেখে যেতে চাই তবে অবশ্যই তাদের জন্য কাজ করতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থাকে। দুর্গন্ধময় নষ্টপ্রেমের চলচ্চিত্র দেখে দেখে আমাদের শিশুদের মন বিষিয়ে উঠেছে। তাদের মুক্ত হাওয়া দিতেই না হয় আমরা সুন্দর গল্পের একটি চলচ্চিত্র বানাই। না হয় কোন ব্যবসা না- হলো। বছরে একটি করে শিশুদের চলচ্চিত্র নির্মিত হলেও আজকে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের এতগুলো বছর পরে হাতে কমপক্ষে ৪০টি সিনেমা থাকত। না তা হয়নি। হলিউড পিছিয়ে নেই। উইকিপিডিয়ায় হলিউডের শিশুতোষ চলচ্চিত্রের তালিকা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় প্রত্যেক বছর অসংখ্য সিনেমা তৈরি হচ্ছে। শুধু আমরাই পারছি না। কারণ আমরা নিজেরাই বিষাক্ত। বিষহীন শিশুমন তৈরি করব কীভাবে? আমাদের শিশুমন নেই যে।

শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০

সাক্ষাৎকার-সাজ্জাদ হোসাইন খান


সত্যের প্রতি নিষ্ঠা সাধনার প্রতি একাগ্রতাই হওয়া উচিত,
একজন সাহিত্য পথিকের
সা জ জা দ  হো সা ই ন  খা ন


[সাজজাদ হোসাইন খান একজন প্রবীন এবঙ প্রথম সারির লেখক ও বুদ্ধিজীবি। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে তাঁর উত্থান। তিনি একাধারে ছড়া, প্রবন্ধ, কথাসাহিত্য ও সম্পাদনায় সমানভাবে অবদান রেখে চলেছেন। বিশেষত তিনি শিশু-কিশোরসাহিত্যে অসাধারণভাবে তাঁর কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন। এতদসত্বেও তিনি ছড়াকার হিসেবেই সর্বত্র পরিচিত। তাঁকে সবাই জানেন ছড়ার যাদুকর বলে। তাঁর লেখায় উঠে এসেছে শেকড়ের কথা। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। বাংলাসাহিত্যে তাঁর অবদান অসামান্য। বর্তমানে তিনি দেশের প্রাচীনতম একটি পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর সীমাহীন ব্যস্ততার মাঝেও আমাদেরকে তিনি সময় দিয়েছেন তাই তাঁর কাছে আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শীতলক্ষ্যার সম্পাদক তরুণ কবি আহমেদ খায়ের। এক্ষেত্রে সর্বাত্নক সহায়তা করেছেন কবি, ছড়াকার ও সম্পাদক রেদওয়ানুল হক। এজন্যে আমরা তাঁর কাছেও যারপরনাই কৃতজ্ঞ।]


শীতলক্ষ্যা : আপনার সময় কিভাবে যাপন করছেন!

সাজজাদ হোসাইন খান :
    সময় কখন যাচ্ছে চলে
                                           জমছে কথা বুকের তলে
                                           নিশীথ রাতে চাঁদের চোখে
                                           জোসনা যেমন ঝরছে গলে।
 
শীতলক্ষ্যা : অনেকে আপনাকে বাংলাদেশের অন্নদাশংকর রায় বলে থাকেন। ছড়াকে আপনি যুদ্ধের অস্ত্র মনে করেন। তো সে দিক থেকে এখন ছড়ার অবস্থা কেমন?

সাজজাদ হোসাইন খান : মনে করতেই পারেন। এমন যাঁরা মনে করেন   হয়তো  এটি তাঁদের  একধরনের ভালোবাসার প্রকাশ, আমার প্রতি। এজন্যে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আমি। অন্নদাশংকর রায়  একজন  বড় লেখক। মহান লেখক। তুলনা  হতেই পারে। আমি নিজেও  তাঁর মুগ্ধ পাঠক। তবে  আমি আমার মতো। ছড়া অবশ্যই  যুদ্ধের অস্ত্র। বন্দুক বা কামানের গোলায়  মানুষের মৃত্যু ঘটে  তাৎক্ষণিক। কিন্তু  শব্দাস্ত্র  মানুষের  হৃদয়  এবং বিবেককে ক্ষত-বিক্ষত  করে, মরণঅবধি। ছড়ার  অবস্থানতো  দিন দিনই দৃঢ় হচ্ছে, পুষ্ট হচ্ছে।

ছড়া অবশ্যই  যুদ্ধের অস্ত্র। বন্দুক বা কামানের গোলায়  মানুষের মৃত্যু ঘটে  তাৎক্ষণিক। কিন্তু  শব্দাস্ত্র  মানুষের  হৃদয়  এবং বিবেককে ক্ষত-বিক্ষত  করে, মরণঅবধি। ছড়ার  অবস্থানতো  দিন দিনই দৃঢ় হচ্ছে, পুষ্ট হচ্ছে

শীতলক্ষ্যা : ছোটবেলায় আপনার ছড়া, গল্প ও কিশোর উপন্যাস পড়তাম। অসাধারণ ছিলো সেগুলো। আপনি প্রধানত  শিশু-কিশোরদের জন্যে  লেখেন  কেনো, আর কবিতা লেখেন না কেনো?

সাজজাদ হোসাইন খান :
  সাধারণ  না   অসাধারণ  এ বিষয়ে   আমার  কোনো  মন্তব্য  নাই।  তবে  একজন লেখকের জন্য  পাঠকের  ভালোবাসাটাই পরম  প্রাপ্তি। এদিক থেকে  হয়তো   আমি অনেকটাই তৃপ্ত। লিখতে বসে সব সময়ই চেষ্টা করি পাঠকের হৃদয়ের কাছাকাছি থাকতে,   তারা   শিশু-কিশোরই   হোক  বা   তাদের আব্বারাই হোক। শিশুকিশোরদের প্রতি আপাত্য-স্নেহ-ভালোবাসাই হয়তো এ শাখায় স্থিত করেছে আমাকে। ছড়া কি কবিতা নয়! একটি শিল্পসম্মত ছড়া আর একটি ভালো কবিতার তেমন কোনো পার্থক্য আছে কি?

শীতলক্ষ্যা : লেখালেখির জগতে কেনো, কিভাবে এলেন। লেখক না হলে কি হতেন?

সাজজাদ হোসাইন খান :
  এমন প্রশ্নের জবাব বহুবার বহুভাবে দিয়েছি। তবে মনে হয় আমার রক্তেই লেখক নামের একটি বীজ সুপ্ত ছিলো। সেই বীজই অঙ্কুরিত হচ্ছে দিনদিন। আমার দাদার বড় ভাই আবদুল লতিফ খান ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক। একুশ, বাইশ সালের দিকে বিশেষ  প্রতিপত্তি ছিল তার লেখার জগতে। দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় তিনি ছিলেন একজন স্বনামধন্য লেখক। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইসলামিক রিভিওতে দীর্ঘদিন তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে, উনিশশ বাইশ-তেইশ সালের দিকে। তিনি মূলত ছিলেন ইতিহাসবিদ। এ বিষয়ে বেশ কিছু বই আছে তার। বোধহয় সেখান থেকেই আমার লেখক হওয়ার অনুপ্রেরণা। লেখক না হলে কি যে হতাম জীবনের এতটা সময় পার করে এসে কি আর বলা যায়। তবে ডাক্তার হবার একটা বাসনা ছিলো কলেজ জীবনে। যদিও স্কুল পাঠরত অবস্থায়ই লেখালেখির মশক শুরু করেছিলাম। শুরু করেছিলাম মনের আনন্দে। নিজের আনন্দকে অপরের আনন্দের গভীরে পৌঁছে দেয়ার জন্যে।

শীতলক্ষ্যা : অনেকের মধ্যে পাশ্চাত্য বা অন্যান্য দেশের মাপকাঠিতে আমাদের সাহিত্যকে বিচারের প্রবণতা দেখা যায়। এবং অমুকের লেখা হয় তমুকের লেখা হয় না ইত্যাকার মন্তব্য শোনা যায়। তাদের জন্যে আপনার বক্তব্য কি? 


সাজজাদ হোসাইন খান :  বিচার আচারের মধ্যে জ্ঞান-গম্মির  বিষয়টি উঠে আসে বৈ কি। সেটি পশ্চেমেরই হোক বা পুবের সাহিত্যই হোক। এতে করে ভাবনার জগতের সমন্বয় ঘটে। তুল্যমূল্যে  সুবিধা হয়। দূরত্ব ঘোচে। ভিনভাষায় অনেক মহান লেখক আছেন, বড় বড় জ্ঞানী আছেন সে কথা ঠিক। বাংলা ভাষায়ও কি বড় লেখক বা পন্ডিতের কমতি আছে! সৈয়দ আলাওল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের মতো মহৎ লেখক কোনো অংশেই তো কম না। তাদের ধীশক্তি মেধার বিচারে তো তালিকার উপর দিকেই থাকার কথা। লেখা ভালো বা মন্দ এর বিচার করবেন পাঠক। যারা এমন বলেন তারা তাদের হৃদয়ের অপ্রশস্ততাকেই প্রকাশ করেন।
বিচার আচারের মধ্যে জ্ঞান-গম্মির  বিষয়টি উঠে আসে বৈ কি। সেটি পশ্চেমেরই হোক বা পুবের সাহিত্যই হোক। এতে করে ভাবনার জগতের সমন্বয় ঘটে। তুল্যমূল্যে  সুবিধা হয়। দূরত্ব ঘোচে। ভিনভাষায় অনেক মহান লেখক আছেন, বড় বড় জ্ঞানী আছেন সে কথা ঠিক। বাংলা ভাষায়ও কি বড় লেখক বা পন্ডিতের কমতি আছে! সৈয়দ আলাওল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের মতো মহৎ লেখক কোনো অংশেই তো কম না। তাদের ধীশক্তি মেধার বিচারে তো তালিকার উপর দিকেই থাকার কথা
 
শীতলক্ষ্যা : সত্তরের দশক থেকে বলা চলে ষাট থেকে আপনি লিখে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ৬৯,৭১,৭২,৭৫ এর মতো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বছর পার করেছেন। বয়স্ক চোখে তুলনামূলক আপনার দুনিয়াকে এখন কেমন মনে হয়?


সাজজাদ হোসাইন খান :  আমার চোখে এ দুনিয়াকে এখনো রঙিনই দেখছি। এ দীর্ঘ ব্যবধানে সাহিত্যের জগৎ প্রশস্ত হয়েছে। প্রকরণগত কৌশলগত পরিবর্তন ঘটেছে, লেখা এবং লেখকের ভিড় বেড়েছে এদিক থেকে কোনো সন্দেহ নাই। মেধার ঐশ্বর্য কি বেড়েছে? কবি আল মাহমুদ চলে গেলেন। এমন তো আর কাউকে দেখছি না। দূরাগত কোনো নিঃশ্বাস- প্রশ্বাসের শব্দও ভেসে আসছে না। তবে আমি আশাবাদি। অবশ্য দুনিয়া এমনি হয়। কখনো লাল কখনো নীল। কখনো আবার ধূসর। এটিই দুনিয়ার চলমান  প্রক্রিয়া, কি লেখার জগৎ, কি দেখার জগৎ।

শীতলক্ষ্যা :
আমাদের (বাংলাদেশের) সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যে কতটুকু স্থান করে নিতে পেরেছে। কোন সময়কে বাংলাসাহিত্যের স্বর্ণযুগ বলা যায়?

সাজজাদ হোসাইন খান :
 
তামাম বিশ্বই বর্তমানে মানুষের হাতের মুঠোয়। তাই দেশে দেশে চিন্তা চেতনার মাখামাখিটা প্রতিদিনই দৃঢ় হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন শহর থেকেই বাংলাভাষায় পত্র-পত্রিকা প্রকাশ পাচ্ছে। অর্থাৎ বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে। অন্যদিকে ভাষান্তরও হচ্ছে। তবে বলতে দ্বিধা নেই হাতেগোনা জনা কয়েকের সাহিত্যকর্ম ব্যতিরেকে অনুবাদের ক্ষেত্রেটি অনেকটাই অনুজ্জল। তাই বিশ্বসাহিত্যে আমাদের উপস্থিতি ততটা সরব নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে চিন্তা করলে বলতে হয় ষাটের দশক।

কবি আল মাহমুদ চলে গেলেন। এমন তো আর কাউকে দেখছি না। দূরাগত কোনো নিঃশ্বাস- প্রশ্বাসের শব্দও ভেসে আসছে না। তবে আমি আশাবাদি। অবশ্য দুনিয়া এমনি হয়। কখনো লাল কখনো নীল। কখনো আবার ধূসর। এটিই দুনিয়ার চলমান  প্রক্রিয়া, কি লেখার জগৎ, কি দেখার জগৎ

শীতলক্ষ্যা :  জীবনে  কোনো  অতৃপ্তি  আছে?

সাজজাদ হোসাইন খান :  আমি তৃপ্ত।

শীতলক্ষ্যা :  তরুণ-নবীনদের  মাঝে  কতটুকু সম্ভাবনা দেখতে পান? তাদের প্রতি আপনার নসিহত কি?

সাজজাদ হোসাইন খান : তরুণদের অনেকেই ভালো লিখছে। সত্যের প্রতি নিষ্ঠা সাধনার প্রতি একাগ্রতাই হওয়া উচিত, একজন সাহিত্য পথিকের।

শীতলক্ষ্যা : লিটলম্যাগ শীতলক্ষা’র পক্ষ থেকে অশেষ কৃতজ্ঞতা আপনাকে। যেনো সুস্থতার সাথে সবকিছু আঞ্জাম দিয়ে যেতে পারেন।

সাজজাদ হোসাইন খান :
  শীতলক্ষা’র প্রতিও আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। তারা আমার মতো একজন লেখককে স্মরণ করেছে এজন্যে।  লিটলম্যাগ শীতলক্ষার ভবিষ্যত উজ্জ¦ল হোক, বিকশিত হোক। সাহিত্যের আকাশকে করুক বিম্বিত।

শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০

ঈদ সংখ্যা-২০২০


ঈদুল ফিতর সংখ্যা-২০২০

ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর সবচে বড়ো উৎসব। প্রতিবছর ঈদের অনেক আগে থেকেই শুরু হয় ঈদের প্রস্তুতি। সর্বত্র বিরাজ করে উৎসব উৎসব ভাব। রমজানের শেষদিকে বিপণীবিতানগুলোকে থাকে উপচে পড়া ভীর। জীবিকার সন্ধানে শহরে ছুটে আসা মানুষগুলো ঈদের ফুসরতে গ্রামে ছুটে যায় শিকড়ের আহবানে, নাড়ির টানে। আত্মীয় পরিজন নিয়ে একত্রে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার মাঝে খুঁজে পায় বেহেশতি আনন্দ। ঈদের জামাতে চেনা-অচেনা মানুষগুলোর সাথে ঘটে মহামিলন। সবার মাঝে পুণর্মিলনের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।

কিন্তু বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সে উৎসব এখন বিস্বাদে রূপান্তরিত হয়েছে। কোথাও নেই ফুর্তির আমেজ। সবার মাঝে একটা শূণ্যতা। সবার মাঝে আতঙ্ক। এই প্রথমবারের মতো বিশ্ববাসী একটা বিস্বাদময় ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে। নবীন লেখকদের কলমের কালিতে সেই বিস্বাদের চিত্র কিছুটা ফুটে উঠেছে। প্রবীন লেখকদের কাছ থেকে নতুন লেখা নিতে না পারায় তাঁদের নিতুন অভিমত থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। সেজন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। সামনে শুধু প্রবীনদের লেখা নিয়ে একটা ঈদ সংস্করণ করার আশাবাদ এবং সবার সুস্থতা কামনা করে আজ এ পর্যন্তই। - সম্পাদক




সা জ জা দ  হো সা ই ন  খা ন 
ঈদ আসে ঈদ যায় 

ঈদ আসে ঈদ যায় ঈদ থাকে ঝুলে
হৃদয়ের রেণু মেখে গোলাপের ফুলে
আকাশের ছাদ ভেঙে ঈদ উঠে হেসে
ঈদ হাঁটে তারাদের গাঁও ঘেঁষে ঘেঁষে।
জাফরানি খুশবুতে ঈদ ঝুরঝুর
ঘরে ঘরে নাচে তাই খুশির দুপুর

ঈদ আসে ঈদ যায় ঈদ অফুরান
ফজরের ঘুম হাওয়া দোয়েলের গান।
রঙমাখা প্রজাপতি জোনাকির বাতি
ঈদ যেন সাগরের ঢেউ মাতামাতি

সূর্যের দড়ি বেয়ে ঈদ নামে নিচে
উম উম্ ভালবাসা আসে পিছে পিছে।
সম্প্রীতি বন্ধন ঈদ তার নাম
স্নেহের সবুজ খামে মধু আনজাম




না সি র  হে লা ল 
ঈদের খুশি 

রাত থম্ থম্ রাতের শেষে সকাল যখন হবে
মনের মাঝে ঈদের খুশি জমাট বেঁধে রবে।
ঈদের খুশি ঈদের খুশি বাঁকা চাঁদের হাসি
ফিরনি কাবাব পায়েস সেমাই দেব রাশি রাশি।
ঈদের খুশি সকাল বিকাল ঈদের খুশি রাতে
নতুন জামা নতুন কাপড় পরবো সবাই প্রাতে।
ঈদের খুশি বাড়ি বাড়ি ঈদের খুশি মাঠে
ঈদের খুশি শহর গঞ্জে ঈদের খুশি হাটে।
ঈদের খুশি ছেলে বুড়োর ঈদের খুশি নানার
ঈদের খুশি গরিব দুঃখীর দুঃখ কথা জানার।
ঈদের খুশি উদার আকাশ ঈদের খুশি দানের
ঈদের খুশি দুহাত ভরে উচ্ছল যত প্রাণের



আ ফ সা র  নি জা ম 
শখ পূরণের ঈদ 

সন্ধ্যা রাতে দেখবে যেদিন হাসলো নতুন চাঁদ
বাড়িয়ে দিও বন্ধু তুমি ছোট্ট দুটি হাত

হাতের ভেতর ছড়ায় দেবো লক্ষ তারার ফুল
ফুলগুলোকে বিলিয়ে দিতে করবে না তো ভুল

ভুল করো না বন্ধু তুমি দিও সবার হক
ফুলের ভেতর লুকিয়ে আছে অনেক মনের শখ

শখ পুরনের আসলো ঈদের দিন
উঠলো হেসে আদম-পরী-জ্বীন




রে দ ও য়া নু ল  হ ক 
ঈদটা সবার 

ঈদটা সবার জন্য হোক
কালো-ধলোর বিভেদ ভেঙে
চাঁদটা হেসে উঠুক রেঙে
সবাই সবার অতি প্রিয়
মানুষ বলে গণ্য হোক
যেই ঘরেতে নেইকো খাবার
অসুস্থতায় ভুগছে আবার
তার ঘরেও ঝরুক রহম
কোরমা-পোলাও অন্ন হোক

পথের ধারে যেই শিশুটি
উদোম দেহ নেই কিছুটি
তার গায়েও নতুন জামা
জড়িয়ে প্রসন্ন হোক

যেই মানুষটা পলে পলে
স্বজন হারার শোকে জ্বলে
তার কাছেও ঈদটা এসে
অতুল অনন্য হোক

ঈদটা সবার জন্য হোক
ধন্য চির ধন্য হোক 



সি দ্দি ক  আ বু  ব ক র 
আমার ঈদের জামা 

আমার ঈদের গল্প বলি শোনো! 
নতুন জামায় কাজ ছিলো না
ইস্ত্রি করা ভাঁজ ছিলো না
নেপথলিনের ঝাঁজ ছিলো না কোনো।
 
কেমন ছিলো সেই জামাটা জানো!
ধবধবে দুধসাদা।
আধেক জুড়ে স্বপ্ন ছিলো
তৃপ্তি ছিলো আধা,
মমতা আদর ছিলো
সুতোয় সুতোয় বাঁধা।

আজও ঈদের জামা আছে
জরিবুটির কাজ
স্যুটে বুটে হালফ্যাশন আর
বাহারি রঙ সাজ।

সব আছে ঠিক; কী যেনো নেই
কী যেনো নেই আহা
খলখলানো হাসির বানে
ঢেলে দিতাম যাহা! 
জামা জুতায়
নানান ছুঁতায়
নকল খুশির ঈদ
আদর ভালোবাসার ঘরে
সিঁদ কেটেছে সিঁদ

 
সৈ নি ক  কা ই জা র 
রুবাইয়্যাত 

)

সারাক্ষণ শুধু তোমার ভাবনা মনে ঘুরপাক খায় 
স্বপনেও আসে সোনালি বরন চলে যাই অজানায়,
ক্ষণেক যদিবা ভুলেছি তোমায়;
তোমার ঠোঁটের তিল  নিয়ে ভাবি। এরপরও তুমি ডাকবেনা ইশারায়?

)
আমার হৃদয় করেছি টুকরো সমান কয়েক  ভাগে
অতি প্রিয় যারা বিলিয়ে দিবো ভালোবেসে অনুরাগে
সাকি তুমি যদি একবারও দেখো আমার বদনখানি
পুরোটা হৃদয় তোমাকে দিবো সকলে আসার আগে।


মোঃ  আ মি নু ল  ই স লা ম 
সার্বজনীন ঈদ এবং 

খুশির ঈদের ডঙ্কা বাজে শহর বন্দর গ্রামে,
ছেলে-বুড়ো খোকা-খুকি খুশি ঈদের নামে
সাধনার এই সিয়াম চর্চায় মুখ্য ধর্ম পালন,
ঈদ আনন্দ খুশির বার্তা সারাটা মাস লালন
নানান রঙে পোষাকি সাজ চক্ষু জুড়ায় ঈদে,
দীনের খুশি রাস্তায় লুটোয় কান্না ভাসে হৃদে
হালুয়া আর ফিরনির স্বাদে তৃপ্ত বিত্তের রসনা,
বস্তিবাসী  ঈদের  প্রাতে  জুঝে পেটের বাসনা
উচ্চের পোষাক দেখে আর্ত স্বপ্ন চিত্র আঁকে,
ছেঁড়া কাপড় ঈদের সকাল শুধু লজ্জা ঢাকে
স্বামী হারা দুখিনী মা শিশুর দুগ্ধ যাচে,
অনাহারে  অর্ধাহারে  ঈদের দিনও বাঁচে
বাতির নীচে অন্ধকার কি চক্ষু এড়ায় কভু?
পরীক্ষাটা উচ্চের তরে রাখলাম মহান প্রভু

ঈদ  আনন্দ সর্বজনীন  ধর্মের আচার জানি,
ধনীর ধনের সঠিক বণ্ঠন করি নিয়ম মানি
অনাথ দীনের ঈদ আনন্দ চাঁদের মতো হাসবে,
ঈদের মাঠে বিত্তের দলে আর্ত সুখে ভাসবে


জা হা না রা  ম জু ম দা র 
দুর্দিনের ঈদ 

এখন পৃথিবীর  অন্ধকার সময়; 
নগর বন্দর শহর গ্রাম পথঘাট স্তব্ধ
শোকাবহ আলোর শব্দ শেল
পাখির ডানার ঝাপসা গুঞ্জরণ
সময়ের অজানা সাগরতীরে ধীরে ধীরে হৃদয়ের ক্ষয়
সারি সারি শবের বিবরণে
করোনা মহামারীর নিঃশব্দ থাবায়
এমনি দুর্দিনে শাওয়ালের আকাশে চাঁদ
নিয়ে আসবে ঈদের পয়গাম
মহামিলনের তরে
কিন্তু নেই কোনো সহবত কোনো কথা বা শব্দ,
এই আকাশ তারা গ্রহ নক্ষত্র কিছুই নেই
যেন সব ফুরিয়ে গেছে
পরিযায়ী মজদুরদের অশ্রুতে ধুয়ে 

কৃ তি ক ণা 
অনুকবিতা 

ঈদের চাঁদে খুশির পরাগ
জ্যোৎস্না হয়ে ঝরবে
ঘরে ঘরে রংবাহারী
সুখের আলোক জ্বলবে

খ ন্দ কা র  লু ৎ ফু ন  না হা র 
ঈদের তফাৎ 

এলো খুশির ঈদ।
হাসছে খুকি নাচছে খোকা
গাইছে সুখের গীত।

আনন্দ যে আর ধরে না
করিম চাচার ঘরে,
সারা বছর পায়না কাপড়
ঈদেই শুধু পড়ে। 

এমনিতেই কি হয় সে কাপড়, 
কেউ না দিলে পরে?
রমজান এলেই ধনীর ঘরে
হুমরি খেয়ে পড়ে।

যখনই তার কারো সাথে
পথে যেতে হয় দেখা, 
হাতটি পেতে বলে বাবা
দাওনা কিছু টাকা।

সারা বছর আশায় থাকি
দাও যদি হাত ভরে,
তবেই না খোকা-খুকি
ঈদের কাপড় পড়ে।

ওইদিকে যে ধনীর দুলালী
রহিম মিয়ার মেয়ে-
আলমারিতে কাপড় দেখে
কোনটি পড়বে গায়ে।

দুই হাতে সে মেহেদি পড়ে
আলতা পড়ে পায়, 
ঈদের দিনে চার-পাঁচবার
কাপড় সে পাল্টায়।

খাওয়া দাওয়ার নেইকো জুড়ি
বাড়ি ভোজন ভারী,
ঐদিকেতে করিম চাচার
চুলোয় বসে না হাড়ি।

ধন দুলালী সালাম করে
সালামি পায় কতো! 
এসব দেখে খোকা-খুকি
হয় যে আশাহত।

করিম চাচা অসুস্থ তাই
মা ঝিয়ের কাজ করে,
ওখান থেকে যে খাবার দেয়
নিয়ে ফেরে ঘরে।

এমনি করে দিন চলে যায়
আসে কত ঈদ,
খোকা-খুকির সেই আনন্দে
চোখে নাইকো নিদ 


মোঃ  জা কি র  হো সে ন  ভূ ই য়াঁ 
অসময়ের প্রানের শহরে 

আমি এখনও বেঁচে আছি প্রাণের শহরে!
হ্যা, এখনও আছি যে এই অসুস্থ শহরে।
একদিন প্রাণ ছিল, ঘুম আসতো স্বপ্নের আহ্বানে।
গাড়ীতে ঠাসাঠাসি ছিল পিচঁঢালা রাজপথে
অলিতে গলিতে রিকসা ভ্যানের ছড়াছড়ি।
অগণিত মানুষ আর বাইসাইকেলে হামাগুড়ি-
রাজপথের রাস্তা ‍কিংবা ফুটপাতের সবখানে।
আজ শূন্যতার আহ্বান এক হয়ে সব জনমতে
প্রথম স্থানে ছিল নষ্টদের তালিকা অনুসারে
তারপরেও রয়ে গেছি আমি তোমাদের ভীড়ে।

সবর্ত্র জনমানবহীন নীরব, নির্জীব, নেই কলরব।
বছর একুশে দেখিনি আমি, তার এমন অবয়ব
অনেকেই যাচ্ছে চলে সাড়া দিয়ে ওপারের ডাকে,
আমিও পথ চেয়ে আছি ধ্বংসস্রোতে নিয়ে আমাকে।
শেষ গলির শেষ বাড়িটার সেই মেয়েটা-
হরিণ চোখ! চলন ছিল বেশ ছটফটা।
চলার পথে ডাকতো আমায় হাতের ইশারায়,
মনের কথাগুলো বলে যেত চোখের ভাষায়।
ব্যর্থ প্রেমে রুদ্ধশ্বাসে কান্নায় আমার বুকফাটা
আজ কোথায় আছে সে কেউ জানে না।
নীরবে হারিয়ে গেছে কোথায়, কোন সুদূরে!
আজ চারিদিকে শুধু শঙ্কা, অসহ্য মৌনতা;
অঙ্কুরিত স্বপ্নে ভেসে আসে মৃত্যুর বারতা।
এই শহর আজ ঘুমিয়ে হয়েছে চির অচেনা,
আমি এখনো আছি রুদ্ধশ্বাসের অচেনা নগরে।
আমার হবে সারা হয়তো র্ব্যথতা নিয়ে ঘাড়ে।


মা ন সু র  মু জা ম্মি ল 
যে পেয়েছে রমজান

রমজান ধৈয্য রমজান সহ্য রমজান আলো
রমজান কেটে দেয় যতো হৃদয়ের কালো।
রমজান নিয়মের- রমজান রুটিন
রমজান কম খান রমজান প্রোটিন।
রমজান ছোটদের বড়দের আর সকলের
রমজান সমজান- মসজিদ দখলের।
রমজান হেঁটে আসে সকলেরে বাঁচাতে
শয়তান রেখে দাও লৌহের খাঁচাতে।
সারাদিন রোজা রেখে খাও সবে ইফতার
ক্ষুৎ-পিপাসায় আছে যে  ভিজিয়ে জিভ তার

যে পেয়েছে রোজা
সেই হোক সোজা,
রমজান হলো আল্লাহ্‌র আদেশ মনে রেখো।
তাকে বলো হতে তৈরি
সময়টা যে বেশ বৈরী!
যে পেরুতে চায় হে পুলসিরাতের সাঁকো


তৌ ফি ক  হা সা ন 
বর্ণহীন ঈদের ডাক শুনি 

পবিত্র রমজান হয়ে এলো বলে শেষ
দুয়ারে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি ঈদ,
মহামারীর কাল ধোঁয়ার বিষাক্ত রেশ
ভয়াল ছোবল কেড়ে নিছে নিদ!

দাউ দাউ করে জ্বলছে মৃত্যুর আগুন
মনে আতঙ্ক মহামারীর বিষদাঁতে,
রমজানে তারাবি ঘরে বসে গুন গুন
দোয়া-দরূদ গৃহেতেই দিনে রাতে!

শ্রমজীবীরা কর্মহীনে খাদ্য হাহাকার
লকডাউনে অর্থনীতিতে অচলতা,
মানব মনের সুখগীতি উবে মুখ ভার
জীবন তরীতে কবে যোগ সচলতা?

ঈদ কেনাকাটার নেই তো আয়োজন
ছেলে বুড়ো মলিনমুখে গৃহে বন্দি,
রমজানে ঘন ঘন বিধাতারেই স্মরণ
অচল দূর হয়ে সচলে কবে সন্ধি?

ক্ষুধার্ত কত মুখ ছিন্ন বস্ত্রে মলিনতা
ঈদের আনন্দ ভাটা পড়ে শেষ,
উজ্জ্বল ঈদে রইবে করুণ নীরবতা
ভাইরাস ত্রাসে দ্যুতি নিঃশেষ!

ঈদ কোলাকুলিহীন ফোনেই কথন
ছোটদের মজার নেই সেলামি,
মায়েদের রান্নার স্বাদ হবেনা গ্রহণ
কয়েদি সাজেই হবো আসামি!

কি আর করা ঘরেই হবে ঈদ যাপন 
গরিবের মাঝে খাদ্য বস্ত্র বিলি,
সামাজিকতার সুখ পাবে না আপন
ভাইরাস তুই সবই কেড়ে নিলি!


আ ল  মা মু ন  
ঈদ এলো 

ঈদ এলো  ভাই  ঈদ এলো
চারিদিকে তাই খুশির  বন্যা
নতুন  জামার জন্য  কাঁদে
গরীব  দুখির পুত্র-কন্যা

তাদের  দুখে আমরা যদি,
দুঃখিত ভাই নাইবা  হই
তবে আমরা মুসলমান,
বলো কেমন করে রই?

ঈমানের দায় পালন করে,
এসো আমরা হই মুসলমান। 
তবেই  রব  উত্তম পুরস্কার
আমাদেরকে  করবে দান 


র হ ম তু ল্লা হ  লি খ ন 
আমি কলঙ্ক হতে চাই 

আমি গোলাপ  নয়,
কাঁটার সুবাস নিতে চাই
আমি পিচঢালা পথ নয়,
গ্রামীণ ধূলোয় হাঁটতে চাই
আমি মুগ্ধ জোছনায় নয়,
অমাবস্যাতে হাসতে চাই
আমি সুমধুর কন্ঠে নয়,
অধিকারের বুলিতে আগুন ঝরাতে চাই

আমি সবুজের ঘ্রাণ নয়,
মরা ঘাসের ধূসর বেদনা চাই
আমি তৈলাক্ত জীবিতদের নয়,
বিপ্লবীর বুলেটে মোড়া হাড় চাই

আমি মেকি সমাজের অভিনয় নয়,
ক্ষুধায় কেড়ে খাওয়া কুকুর চাই
আমি বইয়ের পাতার লেখা নয়,
ডাস্টবিনে  আধ খাওয়া  সিংগাড়া চাই

আমি আদরের লালা দেয়া শরবত নয়,
অপুষ্টিতে পলিথিনে ভাতের মাড় চাই
আমি বহুল আলোচিত মানুষের মত মানুষ নই,
অবজ্ঞায় নাক সিটকানো কলঙ্ক হতে চাই


রা সে দু ল  হা সা ন  রা সে ল 
আমি যেথায় যেমন 

মানুষ যেখানে ক্ষুধায় কাতর,
বাতাসে শুনি ক্রন্দনরোল

আমি সেখানে  সাম্যবাদী  এক-
বিদ্রোহী কবি নজরুল।


ধরণীর যেথায় অন্যায়-অবিচার,
বিভীষিকাময় আর অশান্ত
আমি সেথায় প্রতিবাদী সেই-
কিশোর কবি সুকান্ত।


যেখানে আছে সুখ আর সুখ,
নাই রে কোনো দ্বন্দ্ব।
আমি সেখানে প্রেমের কবি,
রূপসী বাংলার জীবনানন্দ।


দেখি যেথায় পল্লীবালা,
সুখে কাটায় দিন।

আমি সেথায় সহজ মানুষ,
পল্লীকবি জসীমউদ্দিন। 



চি ত্র ক র  ম নি রু জ্জা মা ন  মা নি ক 
দোয়া মাগি 
(দোয়া ইউনুস এর বঙ্গানুবাদ থেকে)  

হে মহান, হে মহামহিম!
আঁধার তলে বিশ্ববাসী;
ভুল করে যে দিশাহারা
মুক্তির লাগি সবে কাঁদি। 


হে ইলাহি, হে দরদী!
তুমি মোদের মা'বুদ জানি,
তুমি ছাড়া উপাস্য নাহি।
একক তুমি, তোমায় স্মরি
হে প্রভু! তোমার ইবাদত করি। 


স্রষ্টা তুমি মহাজ্ঞানী
পুত পবিত্র নূরের জ্যোতি
সকল সৃষ্টির লীলা রথী
তোমার গুনের প্রচার করি। 


বিপদ মহা বাঁচাও প্রভু!
মাছের পেটে ইউনুস নবী-
ডাকলো তোমায় দোয়া চাহি,
তোমার দয়ায় পেল মুক্তি।
আমরা নিশ্চয় পাপী তাপী
তাই তো দিচ্ছ শাস্তি।
বান্দা তোমায় নিদান কালে
দোয়া ইউনুস পাঠে ডাকে যদি
ঝড় তুফানে ডুববেনা তো খেয়া তরী
প্রকাশীলে তোমার বাণী।  


দুঃখ কষ্ট ক্ষুধা ঝরা ব্যাধি
মহিমারী গুনে, লওগো তুলি।
বিপদে এক তুমি রক্ষাকারী
হৃদয় থেকে ক্ষমা চাহি,
তোমার বাণীর তসবি জপি
মাফ করে দাও, দোয়া মাগি



লা ভ লী  ই স লা ম 
বিবেক করি সজাগ 

লকডাউনে রোজা শেষে
ঈদ এসেছে দুয়ারে
দুয়ার খুলে সাদরে বরণ
করবো তারে আদরে
যেমন ছিলাম গৃহমাঝে 
তেমনি ঈদ উৎসব 
পরিবারের সবার সাথে 
ঘরবন্দি সব বান্ধব।
যা আছে আপন নিজ ঘরে 
ধোয়া কাপড় পরে
রেখেছে আল্লাহ্ যা রিজিকে 
খাবো আনন্দ করে
ঈদের খুশি আল্লাহর দান
হবো না তো বিরাগ
প্রতিবেশীর থাকলে অনটন
বিবেক করবো সজাগ। 


হা সা ন  মা হ মু দ 
বাঁচলে আবার 

বাঁচলে আবার মুক্ত বাতাসে পাখির মতো উড়বো, 
চিড়িয়াখানা, জিয়া উদ্যান শিশুর মতো ঘুরবো।
বাঁচলে আবার তারাবী সালাত একসাথে পড়বো, 
বাঁচলে আবার ঈদের জামাত, কোলাকুলি করবো।
বাঁচলে আবার এই নগরের অলিগলি চষবো, 
চা-কফি আর ইফতার খেতে একই সাথে বসবো।
বাঁচলে আবার কাঁনামাঁছি গোল্লাছুটও খেলবো, 
পুকুর নদীর মিঠা জলে ডানা দুখান মেলবো।
ঘরে থাকো সুস্থ থাকো দেশের কথা ভাইবো,
তওবাহ করে রবের কাছে ক্ষমা সবাই চাইবো।


মো ক্তা র  হো সে ন 
ঈদ 

ঈদ মানে আনন্দ আর,
সুখ দুঃখের ভাগ
কে গরীব আর কেইবা ধনী,
বিভেদ ভুলা যাক

সকাল বেলা গোছল করে,
নতুন জামা পড়ে
মিষ্টিমুখ করে মোরা 
ঈদগাহে যাই চলে

নামাজ পড়ে দুহাত তুলে,
করি মোনাজাত। 
হাসিখুশি মুখে মোরা,
করি মোলাকাত। 

ঘুরে ঘুরে সবার বাড়ি,
দেখা করতে যাই!
বড়দের কাছ থেকে,
সালামিও পাই

সবাই সবার বাড়ি গিয়ে 
শিন্নি পায়েস খায়
এতো সুন্দর ধর্মে কি আর
হিংসাকে মানায়?

ঈদ আমাদের হাসতে শিখায়,
ভালো করে মন
এইভাবেই সুন্দর হয়,
আমাদের জীবন

ই ম রা ন  শা হ্  
এমন একটি ঈদ চাই 

এমন একটি ঈদ চাই
সকল গরীব দুঃখির জন্য,
ঈদের দিনেও খাবার থালা
থাকে যাদের শূন্য

নতুন পোশাকে সাজবে সবাই
আনন্দ হৈহুল্লোড়ে,
সেমাই-শিন্নির ঘ্রাণে মেতে
খোকাখুকু উঠবে খুব ভোরে

ধনী-গরীব ভেদাভেদ
রইবে না আর সেদিন,
সবার বাড়ি সবাই যাবে
বাজবে খুশির বীণ

ঈদের নামাজ পড়ে সবাই
মিলাবে কাঁধে কাঁধ,
সেই খুশির জোয়ারে ভাঙ্গবে
প্রতিবছর অনন্দের বাঁধ

এমন একটি ঈদের জন্য
আশায় থাকি রোজ,
কোথায় পাবো হাসিখুশি
এমন ঈদের খোঁজ 

তবেই হবে ঈদের পূর্ণতা
সারা পৃথিবীটা জুড়ে
তবেই আবার ধরা দেবে
সুখপাখিটা ঘরের দুয়ারে

মোঃ আ বু ব ক র সি দ্দী ক 
বেদনা বিঁধুর ঈদ 

ঈদের চাঁদ উঠবে আবার রমজানেরই শেষে,
আনন্দ কি ফুটবে এবার কোন শিশুর মুখে?
চাঁদ দেখার উৎসবে কেউ উঠবে এবার ছাদে?
ঈদের জামাত হবে কিনা সেই শঙ্কায় কাঁদি অঝোরে
সত্তুর বছর পার হলো, পৃথিবী এমন দেখে নি কভু আগে-
কোভিড ঊনিশ নিয়ে  এলো সর্বনাশ, ভাবলে মাথা ঘুরে।

মেয়ে-জামাই আসবে এ আশাতে ধামরাই থেকে
রাতাসাইল চাল এনেছে মা অনেক বলে কয়ে,
হরেক রকম পিঠে করবে বলে ঝিটকা থেকে
এনেছে পাটালী গুড়, রাখছে যতন করে,
নাতি-নাতনীকে পরাবে বলে ঈদের জামা
করেছে সেলাই গভীর রাত্র জেগে,
নতুন টাকার কচকচে নোট
যোগাড় করেছে ঈদের সালামী খাতে,
আজকে সবই বৃথা যাবে, নীরবে চোখের জল সে মোছে।

ঈদের দিনে পাড়া প্রতিবেশী ছেলে রঙ্গিন জামা পরে,
মেয়েরা সব মাথায় ফিতা, ঠোঁটে পলিশ, পায়ে আলতা,
ঘুঙঘুর নিয়ে ছন্দ তুলে হাটে,
মুখে তাদের হরেক রকম খেলনা বাঁশি বাজে,
এবার ঈদে এ সব আর যায় না দেখা পার্ক আর বিনোদন স্থলে।

রাস্তায় বসে ফাতেমা বিবি চাকা লাগানো পিঁড়িতে বসে প্রতিবন্ধি
সমীর মিয়া উচ্চ স্বরে আল্লাহকে ডেকে মরে,
নীলকান্ত নাপিত ঈদের আগে খরিদার না পেয়ে বেজায় গেছে ক্ষেপে,
ব্রজেশ্বর জুতা মেরামতের কাজ না পেয়ে,
বৌয়ের সাথে বড়ই খিস্তিখেউড় করে।

ঈদের দিন আজ।
তিতলী আমার সাত সকালে উঠে,
ও দাদাভাই! জামাকাপড় পরো,
ঈদের জামা পরে মাঠে নামাজ পড়ে আস,
কোলাকুলি করেই তবে কিন্তু আমার জন্য মজা নিয়ে ফিরো,
কেমন করে বলবো তারে বাইরে যাওয়া,
কোলাকুলিতে রয়েছে বড়ই মানা,
দুহাত তুলে বলি ও দয়াময়,
এমন বেদনা বিঁধুর ঈদ যেন আর না আসে এই ধরায়!


স জ ল  ঘো ষ 
রমজানের ঈদ 

হিজরী সন ধরে 
উদয় হতে অস্ত পারে

নিষ্ঠা ভক্তি ভরে রেখেছি উপবাস 

দিনান্তে সন্ধ্যা কালে
সবে মিলে কোলাহলে
করেছি পালন রোজা মাস

অবশেষে এলো ক্ষণ
দিয়ে সবে প্রাণ মন
সারা গায়ে আতর গন্ধ মেখে

প্রাতে সবে স্নান সেরে
নতুন বস্ত্র পরে
মেয়েরা দেয় সুরমা চোখে

সব ভেদাভেদ ভুলে
একসাথে সবেমিলে
ঈদের সকালে মিষ্টি মুখ

সব মান অভিমান
দূর হয় ব্যবধান
ভাগ করে নিয়ে সুখ দুঃখ।



হা জী  নু র  মো হা ম্ম দ 
হারানো স্মৃতি 

মন চায় আমার সেই সময়টা আবার ফিরে পেতে
যেই সময়ে রোজ সকালে যেতাম মাদ্রাসাতে।
মন চায় এ জীবন কাটাই মায়ের কোলে চড়ে
মসজিদে যাই নামাজ পড়তে বাবার দু'হাত ধরে।
বই স্লেট নিয়ে স্কুলে গিয়ে করি লেখাপড়া
রংতুলিতে ছবি আঁকি লিখি গল্প ছড়া।
শৈশবে যে আম কুড়াতাম কালবৈশাখীর ঝড়ে
চৈত্র মেঘের গান গাই উঠানে গড়াগড়ি করে।
হারানো সেই স্মৃতিগুলো শুধুই মনে পড়ে
সেই সব স্মৃতি অতীত হয়ে আছে অনেক দূরে।
চাঁদনী রাতে দাওয়ায় সবে মাদুর পেতে বসে
শোলক শুনে দুলতে দুলতে ঘুমিয়ে যেতাম শেষে 


লা য় লা  আ হ মে দ  সে লি না 
শঙ্কিত ঈদ 

মাহে রমজানের বিদায় শেষে মন হতো বাঁধনছাড়া,
শাওয়ালের এক ফালি খুশির চাঁদ দেখে হতাম যে আত্মহারা!

চাঁদ রজনীতে হাসি খুশি মেহেদী রাঙানো হাত,
আনন্দে কখন যে কেটে যেতো খুশির রাত!

প্রমোদনের আশায় শৈশব কৈশোর যৌবনের ঈদ,
আত্মীয় স্বজনদের উপঢৌকন পেয়ে জাগ্রত হতো নিদ!

শবেবরাতের পর কেনাকাটার পরে যেতো ধুম,
কোভিড নাইনটিন করোনা ভাইরাস কেড়ে নিলো ঘুম।

অদৃশ্য করোনা ভাইরাস এসে করলো পৃথিবী ঘরবন্দী,
লাখো লাখো জীবন নাশ গবেষকরা কখনো করবে নাকো সন্ধি?

বিগত মহামারি প্লেগ,যক্ষা,কলেরা,গুটিবসন্ত লাখো লাখো মানুষের বিনাশকারী,
হোকনা করোনা মহামারি আগের থেকে ভয়াবহ শক্তিশালী।

লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণনাশ করোনা মহামারিতে,
গবেষকরা নিদ্রাহীন বসে নেই ভ্যাকসিন তৈরিতে।

মানুষের মুখে হাসি নেই চারিদিকে শুধু শুনি আতংক হাহাকার,
মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, বন্ধ হয়ে গেছে প্রবেশ দ্বার।

নীরবে রোজা গেলো ঈদ আসবে ঠিকই ধনী গরীবের দুয়ার,
হবেনা ঈদ জামাত, হবেনা কোলাকুলি, সাক্ষাত্কার!

হে খোদা কিসের ঈদ মোদের ?
খুশির বদলে শঙ্কিত বিচলিত!
মৃত্যু পিছু পিছু কখন লাশ হয়ে পড়ে থাকি ঘরে!


মা সু দ  রা না 
করোনা ভাইরাস 

বিশ্ব এখন নিঃস্ব হয়ে করছে আহাজারি, 
আল্লাহ ছাড়া রক্ষা করার নেই কোন কান্ডারী।
বাদশা ফকির করে জিকির তোমারি দরবারে- 
ওগো আল্লাহ ধ্বংস করো ভাইরাস করোনারে।
কেউ প্রবাসে, কেউ বা দেশে যে যেখানে আছে, 
করোনা হতে মুক্তি সবাই চাইছে তোমার কাছে।
যত পাপ, করো মাফ ওগো দয়াময়, 
তোমার ইশারায় জানি সব কিছুই হয়।
হে নিয়তি করি মিনতি আমি মাসুদ রানা
দয়াকরে রক্ষা করো হইতে করোনা 


রা জ না  চৌ ধু রী 
বাবা বিহীন ঈদ 

ঈদ যে বাবা এসে গেলো  তুমি এলে না!
ঈদের বাজার করতে আমায় নিয়ে গেলেনা।
ঈদের কদিন থাকতে বাবা আসতে তুমি ছুটে,
সবার তরে মেয়ের নামটি থাকতো তোমার ভোটে।
বাবার ভোটের সফলতায় টাকার বৃষ্টি হতো,
মানি ব্যাগ বের করে হাসতো বাবা কতো।
এসে গেলো ঈদ যে বাবা এবার এলেনা!
জামা জুতো কিনতে বাবা নিয়ে গেলেনা 


মো হা ম্ম দ   ই য়া সি ন  আ রা ফা ত
ক্ষমার ঈদ 


খুশির পাহাড়
জাগলো আবার
এলোরে রমজান
এক্বিন দিলে
সবাই মিলে
খাহেশাত দেই কুরবান
তাওবা করি

আবার ফিরি
মহান রবের পথে
আশা তবে

ক্ষমা হবে
ঈদের নামাজ শেষে।