রমজানের প্রথম দিন
লু ৎ ফ র র হ মা ন রি ফা ত
হেমন্তের আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘরাশির মতো দাগ কেটে আছে স্মৃতির পাতায় জীবনের প্রথম রোজার সাদামাটা সেই অনুভূতি। দিনটি ছিল শুক্রবার তখন আমি অনেক ছোট। এর পূর্বে আমি কখনো রোজা রেখেছি কিনা তা মনে পড়ে না। রমজান আসলেই সবার মাঝে পরিশুদ্ধতার আমেজ বিরাজ করে। স্রষ্টার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নতশিরে ব্রত হয় প্রভুর কুদরতি পায়। আম্মা ডাকার পূর্বেই সেহরি খাবার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি। খাবার শেষে ফজরের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি নিলাম। বরফ গলা নদীর মতো দিনের একাংশ পার হয়ে গেল তবু পিপাশা আমাকে ক্লান্ত করতে পারেনি। জুম্মার নামাজের আজান হয়ে গেছে, রমজানের প্রথম দিন বলে কথা।
তাড়াতাড়ি মসজিদে উপস্থিত না হতে পারলে বারান্দায়ও জায়গা পাওয়া যাবে না। আমি বিলম্ব না করে ছুটে চললাম পুকুরে। অনেকেই গোসল করছে। আমিও পানিতে নামলাম ডুব দেওয়ার জন্য। প্রথমেই বলে রাখি আমি সাঁতার কাটতে পারি না। ডুব দিতে গিয়ে কখন যে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলাম তার ইয়ত্তা নেই। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, হাত-পা নিস্তেজ হয়ে আসছিল। নিজের অগোচরেই পেটের ভিতর অনেক পানি জমে গেছে । আমি যখন পুকুরের গভীরে তলিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন কারো স্পর্শে এ মনে প্রাণ সঞ্চার হয়। লোকজন আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসে। মরতে বসেছিলাম তাতে দুঃখ ছিল না কিন্তু ডুবে যাওয়ার সময় খাওয়া পানিতে রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে কান্না পাচ্ছিল।
তখন আব্বু অভয় দিয়ে বললেন, অনিচ্ছাকৃত খেলে বা পান করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। এ কথা শোনার পর আমি যতটা খুশি হয়েছিলাম অতটা আনন্দিত আমি আর কোনদিন হইনি। সেই থেকে আজ অবধি রমজানের প্রথম প্রহর আসলেই চিন করে ওঠে বুকের ভিতরটা। প্রতিটি প্রথম রোজাই দাগ কাটতে থাকে অমলিন স্মৃতিতে □□

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন